North Pole


উত্তর মেরু (North Pole) হল পৃথিবীর সবচেয়ে উত্তর বিন্দু; যা দক্ষিণ মেরুর ঠিক বিপরীতে অবস্থিত এবং এটা প্রকৃত উত্তর (True North) কে নির্দেশ করে। ভৌগলিকভাবে উত্তর মেরু হল উত্তর গোলার্ধের সেই বিন্দু যেখানে ভূ-পৃষ্ঠকে পৃথিবীর উত্তর এবং দক্ষিন মেরুর কাল্পনিক সরলরেখা (যাকে পৃথিবীর অক্ষ বলা হয়) ছেদ করেছে। তবে মনে রাখতে হবে যে পৃথিবীর উত্তর মেরু বা ভোগলিক উত্তর মেরু আর ভূ-চুম্বকীয় মেরু দুইটি পৃথক জিনিস

উত্তর মেরু আর্কটিক মহাসাগরের প্রায় কেন্দ্রবিন্দুতে এবং নিকটতম স্থলভাগ গ্রীনল্যান্ডের উত্তর তীর থেকে ৭০০ কিমি (৪০০ মাইল) দূরে অবস্থিত যা প্রায় সর্বদাই চলন্ত বরফ দ্বারা আচ্ছাদিত। যার কারনে বাস্তবে সুক্ষভাবে উত্তরমেরু সনাক্ত করা কঠিন। কেননা উত্তর মেরুতে কোন বরফের উপর আপনি দাঁড়ালে মুহর্তেই বরফ সরে গিয়ে আপনার অবস্থানের পরিবর্তন ঘটাবে। তবে হাতে কম্পাস থাকলে এবং সে অনুযায়ী সার্বক্ষনিক নিজের অবস্থার পরিবর্তন ঘটালে, ক্ষনিকের জন্য হলেও আপনি প্রকৃত উত্তরমেরুতে দাঁড়াতে পারবেন।




উত্তরমেরু জয়
এভারেস্ট জয়ের চেয়ে উত্তর মেরু জয়ের ইতিহাস কম রোমাঞ্চকর নয়। কিন্তু কে সর্বপ্রথম উত্তরমেরুতে পা দিয়েছেন তা নিয়ে এখনো বিভ্রান্তি আছে। আমেরিকান অভিযাত্রী ফ্রেডেরিক আলবার্ট কুক তাঁর দুজন সহযাত্রী নিয়ে ২১ এপ্রিল ১৯০৮ সর্বপ্রথম উত্তর মেরুতে পা রাখেন বলে দাবী করেন। কিন্তু কুক ব্যাপারে সন্তোষজনক প্রমাণ দেখাতে পারেননি বলে তাঁকে স্বীকৃত দেয়া হয়নি।
তবে উত্তর মেরু জয়ের কৃতিত্ব যাকে দেয়া হয় তিনি হলেন আমেরিকান নেভী ইঞ্জিনিয়ার রবার্ট পিয়েরি পিয়েরি দাবী করেন তিনি ১৯০৯ সালের এপ্রিল সর্বপ্রথম উত্তরমেরুতে পা রাখেন। যদিও তাঁর দাবীও বিতর্কিত। কারন তাঁর যাত্রাপথের প্রাথমিক পর্যায়ে জন সহযাত্রী থাকলেও চুড়ান্ত পর্যায়ে তাঁর সাথে কেউ ছিলনা এবং তিনি যে রুট, সময় গতিতে উত্তরমেরু পৌঁছার কথা বলেন তা তার প্রাথমিক সহযাত্রীর বক্তব্যের সাথে মেলেনা।
এভাবে ১৯৮৯ পর্যন্ত রবার্ট পিয়েরিকেই সর্বপ্রথম উত্তরমেরু জয়ী ধরা হয়। কিন্তু ওই সালেই ব্রিটিশ অভিযাত্রী ওয়ালি হার্বার্ট চুলচেরা বিশ্লেষণ করে ঘোষণা করেন যে পিয়েরি আর তার দলবল আসলে ভুল তথ্য দিয়েছেন এবং তারা প্রকৃতপক্ষে উত্তরমেরু পৌছাননি।
এরপর২০০৫ সালে পিয়েরিকে উদ্ধারের জন্য এগিয়ে আসেন এবার আরেক ব্রিটিশ অভিযাত্রী টম এভারি। তিনি পিয়েরির বর্ণনা অনুযায়ী রুটে কুকুরবাহী স্লেজে চড়ে যাত্রা শুরু করেন এবং ৩৬দিন ২২ ঘন্টা পর তিনি উত্তর মেরু পৌছান। এই সময় পিয়েরির বর্ণনাকৃত সময় অপেক্ষা ঘন্টা কম। কাজেই এভারি ঘোষণা করেন যে রবার্ট পিয়েরি আধুনিক দিক-নির্দেশনা যন্ত্র ছাড়াই প্রকৃত উত্তরমেরুতে না পৌছাতে পারলেও এর সবচে কাছাকাছি গিয়েছিলেন এবং তিনিই প্রথম উত্তর মেরু জয়ী।
উত্তর মেরুর দিন রাত
উত্তর মেরুতে দুইটি মৌসুমগ্রীষ্মকাল আর শীতকাল। গ্রীষ্মকাল (১৮৭দিন) পুরোটাই দিন আর শীতকাল (১৭৮দিন) পুরোটাই রাত। একারনে উত্তর মেরুতে সুনির্দিষ্ট কোন ঘড়ির সময় নেই এবং পৃথিবীর ন্যায় কোন টাইম জোন নেই। উত্তর মেরুতে কোন জনবসতি নেই। শীতকালে গড় তাপমাত্রা মাইনাস ৩৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এবং গ্রীষ্মকালে গড় তাপমাত্রা ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এখানকার প্রধান প্রাণী হল মেরুভল্লুক আর বরফের নিচে পানিতে থাকা কিছু মাছ।




উত্তরমেরু আর্কটিক অঞ্চলের সীমানা
উত্তরমেরু এবং আর্কটিক অঞ্চল ৫টি দেশ দ্বারা পরিবৃতরাশিয়া, কানাডা, নরওয়ে, গ্রীনল্যান্ড এবং আলাস্কা। তবে আর্ন্তজাতিক আইন অনুযায়ী পৃথিবীর কোন দেশ উত্তরমেরু বা আর্কটিক অঞ্চলের মালিকানা দাবী করতে পারবে না
আমেরিকানরা বিশ্বাস করে সান্তা ক্লজ উত্তর মেরুতে বাস করেন।



উত্তর মেরুর কয়েকটি মজার তথ্যঃ
১। উত্তর মেরুর অক্ষংশ আছে; দ্রাঘিমাংশ নাই (অক্ষাংশ ৯০ ডিগ্রি উত্তর)
২। পৃথিবীর নিজস্ব ঘুর্ণণের কারনে পৃথিবীর বুকের প্রত্যেক বস্তুরও গতি আছে; তবে আপনি যদি প্রকৃত উত্তর মেরুতে দাড়ান তাহলে আপনার গতি হবে শুন্য
২। উত্তর মেরুতে দাড়ালে সবকিছুই হবে আপনার দক্ষিনে
৩। সূর্য্যদয়ের ১৫দিন আগে আর সূর্যাস্তের পর ১৫দিন রাতের বেলা আকাশ দিনের ন্যায় উজ্জল থাকে।
৩। উত্তর মেরুতে দাড়ালে আপনার কি মনে হবে বলুনতো? মনে হবে সারা দুনিয়া আপনার পায়ের নিচে, তাইনা??
 আপনাদের প্রতি একটা প্রশ্ন (কুইজ):যদি কখনও উত্তর মেরুতে যান আর যদি সেখানে নামাজের সময় হয় তাহলে পশ্চিম দিক কিভাবে বের করবেন বলুনতো?





Comments

Popular posts from this blog

পৃথিবীর কয়েকটি রহস্যময় দ্বীপ ও জায়গার গল্প ও ছবি

দারুল উলুম দেওবন্দ ও ব্রিটিশ সরকার

শিয়া মতবাদ : ইসলামের নামে ভয়ংকর বিশ্বাস ও মুনাফেকি